কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগি থেকে একে একে বের করা হচ্ছে মরদেহ। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। নিহতদের স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে ঘটনাস্থলের আকাশ বাতাস। সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরবের জগন্নাথপুর এলাকায় এ ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘটনার পরপরই পুলিশ বিজিবি র্যাব আনসার ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হওয়ার কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ মিয়া জানান, দুপুর সাড়ে ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এগারসিন্ধু গোধূলী ট্রেনটি। ভৈরব স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় জগন্নাথপুর এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কন্টেইনার (মালবাহী ট্রেন) সিগন্যাল অমান্য করে এগারসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের ৩টি বগিকে ধাক্কা দেয়। এরফলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেসের ৩ বগি। এ ঘটনা তদন্তে দুটি বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মালবাহি ট্রেনের চালক-গার্ডকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান জানান, ঢাকা বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবস এবং চট্টগ্রাম জোনের তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এটা খুবই একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রত্যেক নিহতদের সদকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স নিয়ে আসা হয়েছে। সর্বদা জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতোমধ্যে রাত ৯টায় দুর্ঘটনা শিকার ৩টি বগি রেখে ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে। দ্রুত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনও বগির নিচে মরদেহ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। উদ্ধার অভিযানে স্থানীয় সব প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট, ৯ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আন্তনগর এগারোসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে বেলা ৩টার দিকে ভৈরব স্টেশনের ৩ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এরপর সেখানে ট্রেনটির ইঞ্জিন ঘোরানো হয়। সোয়া তিনটার দিকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ভৈরব স্টেশন ছাড়ে। ঢাকার দিকে যেতে ৩ নম্বর লাইনকে ক্রস করে ১ নম্বর লাইন দিয়ে যেতে সিগন্যাল দেয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে পেছনের দুটি বগি ছাড়া বাকি বগিগুলো ক্রস পয়েন্ট অতিক্রম করে। তখন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি ২ নম্বর লাইন দিয়ে আসছিল। মালবাহী ট্রেনটিও স্টেশনের ১ নম্বর লাইনে প্রবেশের সিগন্যাল পায় এবং ক্রস পয়েন্ট সেইভাবে প্রস্তুত ছিল। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের শেষে দুই বগি ক্রস করার সময় মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনটি ক্রস পয়েন্ট ঢোকে। তখনই এগারোসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিকে ধাক্কা দেয়। এতে পেছনের তিনটি বগি লাইন থেকে ছিটকে উল্টে যায়। বেশ কয়েকজন যাত্রী বগি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে যান। বগির ভেতরে যাত্রীরা একজন অপরজনের অপর চাপা পড়েন। দুর্ঘটনার পর উভয় ট্রেনের চালক পালিয়ে যান। গা ঢাকা দেন স্টেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মরতরাও। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের অংশ খুলে পড়ে যায়।