মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

দুই বোনকে হত্যায় সিসিটিভিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি গ্রেপ্তার: পুলিশ

দুই বোনকে হত্যায় সিসিটিভিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি গ্রেপ্তার: পুলিশ

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তি নিহত ব্যক্তিদের ছোট বোনের ছেলে।


গতকাল রোববার গভীর রাতে ঝালকাঠির সদর উপজেলার আছিয়ার গ্রাম থেকে এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। দুই বোনকে হত্যায় একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজ সোমবার দুপুরে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, আজ বিকেল চারটায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত জানানো হবে।


মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) দেখতে পাওয়া ব্যক্তিই গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি। হত্যার শিকার মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগমের ছোট বোনের ছেলে এই ব্যক্তি। এই ব্যক্তি তার দুই খালাকে হত্যা করেছে।


গত শুক্রবার ৬৪৯ পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়িটির দোতলায় একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগমকে (৫২) ছুরিকাঘাত, শিলনোড়ার আঘাতে হত্যা করা হয়। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।


পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তি মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর শনির আখড়ায় থাকে। এই ব্যক্তি ঘটনার দিন টাকার জন্য পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় তার বড় খালা মরিয়ম বেগমের বাসায় যায়। সেখানে মরিয়মের আরেক বোন সুফিয়া বেগম থাকতেন। তাঁরা তাকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে ছুরিকাঘাত ও শিলনোড়ার আঘাতে দুই খালাকে হত্যা করে। পরে সে তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে গিয়ে আত্মগোপন করে। সে মুঠোফোনে আসক্ত। উগ্র আচরণে কারণে এর আগে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়।


ঘটনার পরদিন মরিয়মের স্বামী বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন বাদী হয়ে রাজধানীর মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। আজ যোগাযোগ করা হলে কাজী আলাউদ্দিন বলেন, পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।


আলাউদ্দিনের বড় মেয়ে ইসরাত জাহান যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, তাঁর মা ছোটবেলা থেকে এই ছেলেটিকে আদরযত্ন করতেন। অথচ তাঁর (ইসরাত) মা ও খালাকে সে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দিল। তিনি হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।


পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়ির সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে নীল রঙের জিনস প্যান্ট ও গাঢ় নীল রঙের শার্ট পরা এক ব্যক্তি বাড়িটির দোতলায় ওঠে। তার মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক আর মাথায় কমলা রঙের ক্যাপ। পরনের কাপড় পাল্টে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর একই ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।


বাড়িতে মরিয়ম বেগম, তাঁর স্বামী কাজী আলাউদ্দিন ও মেয়ে নুসরাত জাহান এবং মরিয়মের ছোট বোন সুফিয়া বেগম থাকতেন। ঘটনার সময় কাজী আলাউদ্দিন বরিশালে গ্রামের বাড়িতে আর নুসরাত অফিসে ছিলেন।


নুসরাত জাহান বলেন, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে তিনি নিজ কর্মস্থলে যান। রাত পৌনে ৯টার দিকে বাসায় ফিরে কলিংবেল বাজালে ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাননি। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে বাসায় ঢুকে মাকে ডাইনিং রুমে আর খালাকে শোয়ার ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।


নুসরাত বলেন, তাঁর মায়ের মাথায় ও পেটে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত হয়। খালার মাথা শিল–নোড়ার আঘাতে থেঁতলানো ছিল। ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল রক্তমাখা চাকু ও শিল–নোড়া। তিনি প্রতিবেশীদের অ্যাম্বুলেন্স আনার অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে বাসায় পুলিশ আসে। খাবারের টেবিলের ওপর একটি মগে শরবত বানানো ছিল। পাশে তিনটি গ্লাস ছিল।


নুসরাত বলেন, ২০ বছর ধরে তাঁরা এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। তাঁর মা অপরিচিত কোনো লোককে বাসায় ঢুকতে দিতেন না। ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী বেশির ভাগ সময়ই ফটকে থাকতেন না। ভাড়াটেরা তালা খুলে আবার লাগিয়ে দিতেন। কোনো কারণে বাড়ির প্রধান ফটক খোলা থাকলে যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে। মরিয়ম ও সুফিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হিমঘরে রাখা হয়েছে। তাঁদের বরিশালে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ