শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

আমে চাঙা রাজশাহীর গ্রামীণ অর্থনীতি

আমে চাঙা রাজশাহীর গ্রামীণ অর্থনীতি

দেশে প্রতিবছরই বাড়ছে আমের বাগান ও উৎপাদনের পরিমাণ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে কয়েক বছর ধরে রপ্তানিও হচ্ছে। গত দুই দশকে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় আমবাগানের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। আম হয়ে উঠেছে লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষিপণ্য। উদ্ভাবিত উন্নত জাত ছাড়াও অনুকূল মাটি ও জলবায়ুর কারণে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোয় আমবাগান বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে অঞ্চলজুড়ে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। 


কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. আজিজুর রহমানের মতে, সারা বছরই আমবাগানকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও বছরের এ মৌসুম, বিশেষ করে মে থেকে আগস্ট-চার মাস রাজশাহী অঞ্চলে আমকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীসহ অঞ্চলের চার জেলায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর বাণিজ্য মূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। 


গাছ থেকে আম নামানো, পরিবহণ, মজুতকরণ, চালান, প্যাকেজিংসহ আমকেন্দ্রিক কর্মযজ্ঞে ৩ লক্ষাধিক মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আমকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ইতোমধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছে আম। বাংলাদেশের আম এখন বিদেশের বাজারেও পৌঁছে যাচ্ছে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য বিভাগের সূত্রমতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় এবার আমের ফলন বেড়ে ২৮ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। 


কৃষি বিভাগের মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষণীয়ভাবে আমবাগান বাড়লেও এখনো উৎপাদনে আধিপত্য ধরে রেখেছে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলো। দেশের মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকই হয় রাজশাহীসহ আশপাশের চার জেলায়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৪ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আমের রাজা ফজলি আমের সিংহভাগই এখানে উৎপাদিত হয়। এ জেলায় শত বছরের প্রাচীন ফজলি আমের বাগান রয়েছে। ফজলি আম আকারে বড় এবং অধিক ফলন হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।


চলতি মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে নওগাঁ জেলায়। এরপর রাজশাহী জেলায় ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন ফলনের আশা আছে। নাটোরে ১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবীব বলেন, আম উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৭ জন বাণিজ্যিক চাষি রয়েছেন। মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থা থেকে বাগান ব্যবস্থাপনা আধুনিক হয়ে ওঠায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের গুণগতমানের পাশাপাশি বেড়েছে ফলনও। 


তিনি আরও বলেন, যুগ বদলের ফলে এখন আমের বাণিজ্যিক মূল্য বেড়েছে। রপ্তানি বাজার অনুসন্ধানের পাশাপাশি আমে নির্ভর কৃষিশিল্প গড়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে আমই রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামীণ ও কৃষি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ