একাত্তরের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শহীদ হয়েছেন লাখ লাখ বীর বাঙালি। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি। রঞ্জিত হয়েছে গ্রামগঞ্জ, শহর-বন্দর, অলিগলি থেকে রাজপথ। একাত্তরের এই দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে।
ডিসেম্বরের এদিন দখলদার মুক্ত হয় দেশের অনেক এলাকা। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার আকাশে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শেষ মরণপণ লড়াই চলে। বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশে পাকবাহিনীর প্রায় সব বিমান। তবে দুপুরের মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশে আগে থেকে মজুত করা পাকিস্তানের সব জঙ্গিবিমান ধ্বংস হয়। এই দিনে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশে পাকবাহিনীর প্রায় সব বিমান। হত্যা ও ধ্বংসের বিভীষিকায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মুক্তিপাগল বাঙালি।
সারাদেশে বিজয়ের রণধ্বনি। ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো সারাদিন ধরে অবাধে আকাশে উড়ে পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়, অকেজো করে দেয় বিমানবন্দরগুলো। ভারতের বিমানবাহিনীর হিসাব মতে ১২ ঘণ্টায় ২৩২ বার তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে ৫০ টনের মতো বোমা ফেলা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়ের ওপর ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো আক্রমণ চালায়।
এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯০টা গাড়ি ধ্বংস হয়।
এ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যবোঝাই কয়েকটা লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে আসতে থাকেন। সম্মুখযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও হারতে থাকে পাকিস্তান। এ সময় বিশ্বনেতাদের চোখে রাজনীতির এক নতুন প্রেক্ষাপট হয়ে ওঠে যুদ্ধরত বাংলাদেশ। কামান-গোলাসহ মারণাস্ত্রের সামনে যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে বাংলার মুক্তিসেনাদের সম্মুখযুদ্ধ দেখে বিস্মিত হয়ে যায় সারা বিশ্ব।