মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

মাকে জীবনের জন্য হুমকি দাবি করে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না ছেলে

মাকে জীবনের জন্য হুমকি দাবি করে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না ছেলে

নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় নিজের জীবনের জন্য হুমকি দাবি করে বৃদ্ধা মা বিলকিস আক্তারকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ নামে এক ছেলে। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাকে হুমকি ভাবছেন মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ। 

সোমবার (১৪ জুলাই) নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। মা যাতে ঘরে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য তিনি বাড়ির সিঁড়িতে লোহার ফটকে দিয়েছেন তালা। সেখানে বসে আছেন ওই মা। কিন্তু মন গলছে না ছেলের। বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বাড়ির নিচতলায় দোতলায় ওঠার সিঁড়ির সামনে গ্যারেজে বসে রয়েছেন বিলকিস আক্তার। রাত আটটা ১৫ মিনিটের দিকেও ওই মা সেখানে বসেছিলেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন। শহরের কাজীর মোড়ে বিলকিস আক্তারের স্বামী নিজের ১০ শতক জমির ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে দুই তলা বাড়িটি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দুতলার একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। ২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ির জমি নিয়ে ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলামের সঙ্গে মা বিলকিস আক্তারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান ওই বসতবাড়ির অংশীদার হন। কিন্তু মোস্তাফিজুল ইসলাম বসতবাড়ির পুরো সম্পত্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু মা ও বোনেরা তাকে বসতবাড়ির জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস আক্তার ২০২১ সাল থেকে অধিকাংশ সময় নওগাঁ শহরেই বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন। আজ (সোমবার) বেলা ১১টার দিকে নিজের বাড়িতে এসে দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে লোহার ফটকে তালা মারা দেখতে পান। তালা মারার বিষয়টি ছেলেকে মোস্তাফিজুলকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন মা যাতে বাড়িতে ঢুকতে না পারে সেজন্যই ফটকে তালা ঝুলিয়েছেন।


বিলকিস আক্তার জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে তার দেখাশোনা করেন না। বোনদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। ছেলের কথা বসতবাড়ির আমার ও মেয়েদের অংশ তাকে লিখে দিতে হবে। কিন্তু তাকে জমি লিখে দিতে তারা কেউ রাজি হননি। এটা নিয়ে বিরোধ শুরু। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর বড় মেয়ের বাড়িতেই থাকি। মাঝেমধ্যে নিজের বাড়িতেও থাকি। আজ বেলা ১১টার দিকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখি, দোতলার সিঁড়িতে কাঁচি গেট লাগিয়েছে এবং তালা ঝোলানো। আমি ছেলেকে তালা খুলতে বললে সে আমাকে বলে, ‘তুই তো দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে গিয়ে থাক। এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।’ আমি আজ রোজা আছি। বেলা ১১টা থেকে বসে আছি। আমি আমার নিজের বাড়িতে ঢুকতে চাই। আমার বড় মেয়ে এসেছিল, তাকেও বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।  


বিলকিস আক্তার বলেন, আমার স্বামী এই বাড়ি করে আছেন। এটা আমার স্বামীর স্মৃতি। জীবনের বাকিটা সময় এই বাড়িতে কাটাতে চাই। এই বাড়িতে আমার মালিকানা কম বলে ছেলে এর আগেও কটাক্ষ করেছে। মেয়েরা আমার অপমান সইতে না পেরে তাদের অংশ আমাকে লিখে দিয়েছে। এই বাড়িতে কাগজে-কলমে আমার অংশই বেশি। কিন্তু আমার ছেলে পুরো সম্পত্তি হাত করার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায় না। 


এ বিষয়ে বিলকিস আক্তারের বড় মেয়ের স্বামী চিকিৎসক আবুজার গাফফার বলেন, আমার শ্যালক এর আগেও শাশুড়িকে নির্যাতন করেছে। এমনকি গায়ে হাতও তুলেছে। এটা নিয়ে মামলাও রয়েছে। আমার শ্যালকের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নেই। নিজের মাকে বলে, ‘তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে থাক।’ এই কথা শুনে ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী ও শ্যালিকা বসতবাড়ির তাদের অংশের জমি মায়ের নামে লিখে দিয়েছে। কাগজে-কলমে আমার শ্বাশুড়ি এখন বসতবাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক। অথচ তাকেই এখন বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।


মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম। তার দাবি, বসতবাড়ি নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে মারামারি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। আমাকে প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর তার মা স্বেচ্ছায় মেয়ের বাসায় বসবাস করে আসছেন। আদালতের নির্দেশে বড় বোনের জিম্মায় আছেন। এখন তিনি আমার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না। তিনি বাড়িতে থাকলে আবারও পারিবারিক কলহ ও মারামারি হতে পারে। যার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ