আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীজুড়ে সড়কে দেখা দিয়েছে যানবাহন সংকট। সকাল থেকেই ঢাকার প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা, গণপরিবহন সীমিত, ব্যক্তিগত গাড়ি ও রাইডশেয়ারিং যানও ছিল চোখে পড়ার মতো কম। রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নিরাপত্তা শঙ্কায় সাধারণ মানুষ, অফিসগামী কর্মী এবং শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
সকাল থেকেই ফার্মগেট, শাহবাগ, মতিঝিল, গুলিস্তান, মগবাজার, সায়েন্সল্যাব, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা— সব জায়গাতেই একই চিত্র দেখা যায়। কোথাও বাস নেই, কোথাও যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কেউ কেউ যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দেন। যারা রাস্তায় নেমেছেন, তাদের অনেকেই সিএনজি বা মোটরবাইকের দ্বিগুণ ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সকাল থেকেই ঢাকার সড়কে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, চালক ও হেলপাররা সম্ভাব্য সংঘর্ষ বা ভাঙচুরের আশঙ্কায় গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে রাজধানীর মধ্যে এবং আন্তঃজেলায় যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
গুলিস্তান, ফার্মগেট, কাকরাইল, শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে— সড়কে চলাচল করছে মূলত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। ভারী যানবাহন, ট্রাক বা বাসের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। শহরের ব্যস্ততম মোড়গুলোতেও ছিল অস্বাভাবিক নীরবতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে টহল জোরদার করেছে, যাতে কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা না ঘটে।
রাজধানীর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আজ মূল সমস্যা যানজট নয়, বরং গাড়ির অভাব। সড়কে গাড়ি নেই, মানুষ দাঁড়িয়ে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তিনি জানান, সাধারণ দিনের তুলনায় আজ অন্তত ৬০ শতাংশ কম গণপরিবহন রাস্তায় নেমেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল অর্ধেকের নিচে। রাজধানীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, ‘পরিস্থিতি অনিশ্চিত মনে হওয়ায় সন্তানকে স্কুলে পাঠাইনি।
মতিঝিলের ব্যাংক কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘বাস না পেয়ে পায়ে হেঁটে অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে। সিএনজির ভাড়া চায় দ্বিগুণ।’ একই অবস্থা উত্তরা থেকে মিরপুরগামী কলেজ শিক্ষার্থী রাফির।
এদিকে, বারডেমে চিকিৎসাধীন রোগী মুনতাসির আল আমিন জানান, রাস্তায় সরাসরি ঝামেলা না থাকলেও সারাক্ষণ ভয় কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কর্মীদের ঝটিকা মিছিল, টায়ার পোড়ানো ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়।
গত কয়েকদিনে ঢাকায় বিভিন্ন বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় একটি বাসে আগুনে দগ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি সরাসরি কোনো কর্মসূচি না দিলেও দলটি যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যানবাহন সংকটে সারাদিনজুড়ে নগরবাসীকে হাঁটতে দেখা গেছে। পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, পরিস্থিতি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বাস রাস্তায় নামানো ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে নগরজীবনে স্থবিরতা তৈরি করছে। গণপরিবহন ব্যবস্থার এই ধস শহরের অর্থনীতি ও কর্মজীবী মানুষের উৎপাদনশীলতায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম



















