মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

ডেইলি স্টার–প্রথম আলোতে হামলা: পুলিশের নিষ্ক্রিতা ব্যাখ্যা

ডেইলি স্টার–প্রথম আলোতে হামলা: পুলিশের নিষ্ক্রিতা ব্যাখ্যা

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলার ঘটনার রাতে পুলিশ কেন নিস্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

সোমবার রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই রাতে পুলিশের ‘অ্যাকশনে’ নামতে না পারার কারণ ছিল—তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত। মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতি না হওয়াকেই পুলিশ অর্জন হিসেবে দেখছে।

তিনি বলেন, “যে কারণে ওখানে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারি নাই, কোনো হিউম্যান লাইফের কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় নাই। এইটা আমি বলব যে, এই এত বড় একটা ইনসিডেন্টের আমাদের এচিভমেন্ট। যে কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালটি ছাড়া এটাকে ট্যাকল দেওয়া গেছে।”

সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু একটা হিউম্যান লাইফ যখন লস্ট হয়, এটা কোনো কিছুর বিনিময়ে আর ফিরায় আনা সম্ভব না। যে কারণে আমরা ওখানে অ্যাকশনে যাই নাই।”


সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় ভিডিও বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


গ্রেপ্তাররা হলেন— মো. নাইম, মো. আকাশ আহমেদ সাগর, মো. আব্দুল আহাদ, মো বিপ্লব, মো. নজরুল ইসলাম মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল রানা, মো. হাসান, রাসেল ওরফে শাকিল, মো. আব্দুল বারেক শেখ আলামিন, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা, শফিকুল ইসলাম, মো. প্রান্ত ওরফে ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, আবুল কাসেম, রাজু হোসাইন ও মো. সাইদুর রহমান।


গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমি খুঁজতে চাচ্ছি না, এরা দুষ্কৃতিকারী। তারা আইন ভঙ্গ করছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন, যে বিচার ব্যবস্থা, সে বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক।”


‘মব ভায়োলেন্স’ ঠেকাতে ডিএমপি কতটা সক্ষম—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সক্ষম। সবসময় সব ঘটনা আমরা কার্ভ করতে পারব বিষয়টা এমন না। কারওয়ান বাজারের ঘটনাটার অন্তরালে আরও কিছু বিষয় আছে। আমরা যদি ওখানে অ্যাকশনে যেতাম তাহলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত।”


পুলিশের ওপর হামলা হলে সামনে এগোনো সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “যদি পুলিশের দুই চারজন সদস্য আবার সেদিন নিহত হইত, তাহলে পুলিশকে সামনে ইলেকশনের সময়ে আগাইতে পারতাম না।”


তিনি আরও বলেন, “অ্যাকশন যেটা সর্বোচ্চ, গুলি করা পর্যন্ত যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা এভয়েড করেছি। কারণ চার-পাঁচ হাজার মানুষের ভিড়ে ৫০-১০০ জন পুলিশ নিয়ে অ্যাকশনে গেলে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের উভয় পক্ষেই ক্যাজুয়ালটি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।”


কারওয়ান বাজারে পুলিশ কখন পৌঁছায়—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “পুলিশ তো ঘটনার আগেই পৌঁছাইছে। পুলিশ বাধা দিয়েছে, মাফও চেয়েছে যেন তারা এই কাজ না করে। কিন্তু আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।”


তিনি জানান, কাঁদুনে গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের মতো অবস্থাও সেখানে ছিল না।


ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কী হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা যদি এডভান্স ইনফরমেশন পাই, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আর্মি সবাই মাঠে আছে।”


ফেসবুক থেকে ‘ইন্ধন’ দেওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তিনি বলেন, “একটি মামলায় পেনাল কোড, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও এন্টি টেরোরিজম অ্যাক্ট যুক্ত হয়েছে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”


ছায়ানট ও উদীচীতে হামলার বিষয়ে তিনি জানান, ছায়ানটের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় এবং উদীচীর ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।


উল্লেখ্য, ১৮ ডিসেম্বর রাতে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরের পর শাহবাগ অবরোধ, কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা, পরে ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ