চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের প্রায় ১১ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক বেগম জেবুননেছা মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
দুদক-এর আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। এ অবস্থা জানতে পেরে কামরুল ও তার স্ত্রী সম্পদ অন্য ব্যক্তি বরাবরে হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সোমবার আদালতে উভয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। এ আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত থেকে এ আদেশ আসে।
দুদক-এর প্রধান কার্যালয় এডিসি কামরুল হাসানের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয় ২০২৩ সালের ৩১ মে। একই বছরের ১৪ আগস্ট তাকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানশেষে দুদক কর্মকর্তা এমরান হোসেন চলতি বছরের ১৩ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎস-বর্হিভূত ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে কামরুল হাসান ও সায়মার মোট স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার।
এর মধ্যে রয়েছে: চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহরে পৃথকভাবে ৪০ শতক জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে শূন্য দশমিক ৩৩ শতক ও পৃথকভাবে দুই কড়া তিন সমস্ত ছয় ভাগের এক দন্ত ভিটি ভূমি, ঢাকার সাভারে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি, সাভার সিটি সেন্টার এন্ড টাওয়ার নামে একটি বারো তলা ভবনের বেসমেন্টে ২২টি দোকানের সমান জায়গা যা ইনফিনিটি মেগামল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে, প্রথম থেকে চতুর্থ তলায় ছয়টি দোকান এবং এর ওপরে সাতটি ফ্ল্যাট।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও আছে, নগরীর খুলশী মৌজায় দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের আওতাধীন জমিতে নির্মিত ফয়জুন ভিলা নামে একটি ভবনে মোট ২৭০৬ বর্গফুট জায়গা, পশ্চিম নাছিরাবাদে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পৃথকভাবে শূন্য ছয় দশমিক ৫৯ শতাংশ নাল জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে সাত শতাংশ ভিটের ওপর ঘর, ঢাকার সাভারের আনন্দপুরে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ নাল জমি, সাভার সিটি টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট এবং সিডিএ’র অনন্যা আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার একটি প্লট।
উভয়ের অর্জিত অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে এক কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে আছে, সোনালী ব্যাংকে ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, সায়মা হাসানের নামে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের চারটি লাইটারেজ জাহাজ।
কামরুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন।