১। অভিমান
অতঃপর উত্তরের অপেক্ষা না করে ফিরে আসার নাম অভিমান
বরং ফিরে-ফিরে আসে ফের
মগের পর মগ ক্যাফেইন গিলে কফিনে পাঠানো ক্লান্তির দল
ঝেঁকে বসে চোখে-মুখে শরীরে, অবশ করে দেয় চেতনার স্নায়ু
দিনে দিনে কমে আসে বিবেকের আয়ু
বিবাদ কেবল আমাদের বিবিধ ভালোবাসা নিয়ে
ভালো তো থাকে পাখিরা...ডালে ডালে কিংবা আকাশে।
আমারও একটা নিজস্ব আকাশ ছিলো
চুরি হয়ে গেছে সে
কার মনের হরষ মেটাতে জানা হলো না আজও।
হরেক রকমের শূন্যতা লেখা হয়েছে হরফে হরফে
ধূসর ও নীলের বাড়াবাড়ি শুধু বেদনা-ই দিয়েছে
ডুঁকরে কেঁদেছে মন মন্দিরে, মসজিদে মজলিসে চুপিসারে
কখনও বা জলধারা বয়ে গেছে বেহায়া দু’চোখ বেয়ে
নিরুপায় চেয়ে দেখেছি নির্বাক
লোনা স্বাদে সম্বিৎ ফিরে
এলেও কদাচিৎ ফেরা হয়নি আর পুরোনো ঠিকানায়
অভিমান গাঢ় হলে
ভালোবাসাও কখনও কখনও হার মেনে যায়।
২। বাক্স ভরা অবসাদ
জনমভর সুখ-স্বপ্ন দেখে যাওয়া মানুষগুলো
চোখে দেখেনা সুখের মুখ, চেখে দেখে না সুখের
কেমন স্বাদ; তাদের বাস্তবতার বাক্স ভরা অবসাদ
বিষাদে মোড়ানো বিশাল বিশাল দুঃখ সমাচার।
অথচ কি আশ্চর্য! সমুদ্র সমান শোক সয়েও মানুষ
মুখে ঝুলিয়ে রাখে সুখ-ভরা হাসির বিজ্ঞাপন
পাহাড় সমান কষ্ট চেপে বুকে, আচরণে আঁকে উল্লাসী ঢেউ
ভেতরটা ঝুরঝুরে হয়ে আছে কতোটা
বাইরে থেকে একেবারেই বুঝতে পারে না কেউ।
আজব ব্যাপার!
ফজরের মতোই জহুর এবং আসরও ফরজ
তবুও লোকের পেরেশানির কারণ কেবল মাগরিব
নাগরিক সড়কে সন্ধ্যায় নামে বস্তা-ভরা ব্যস্ত জ্যাম
নিয়ন আলো গিলে তৃষ্ণা মেটানো পথিক জানে
এষা’র শেষে কেউ কেউ খুলে বসে আদি পেশা
অবসাদ ভুলতে কেউ নিত্যই খোঁজে নিরেট নেশা।
৩। বেদনার মানচিত্র
যার ভাবনায় বোঁদ হয়ে বয়ে গেলো একটি রোদেলা দুপুর
নিক্কন থামিয়ে চুপ করে পড়ে রইলো জোড়া সোনালী নূপুর
নিশ্চিত সে জানবে না কোনো দিন কত নিশি জেগেছে আঁখি
তার আসার পথ চেয়ে বুকের ভেতর কেমন রব উঠেছে ত্রাহি ত্রাহি
নিরবতায় বলা হয়ে গেলে হৃদয়গ্রাহী সব আখ্যান, অসমাপ্ত
রেশম রীতি ভুলে তুমিও বুঝবে একদিন হৃদকম্পের তারতম্য
চৈত্রের নীলাকাশে লীন হয়ে থাকা নীল বেদনার মানচিত্র
ভোরের হাওয়ায় পাঠাবে ভুল সংকেত, তবু-
জানি তুমি ভোরের মতোই পবিত্র, মধ্যরাতের তাহাজ্জুদ।
মনের মন্যুমেন্টে সমাধিস্থ জীবন-দুপুর সায়াহ্ন বেলায়
খুঁড়ে এনে যে স্কেলিটন পাই
সেটার পর্যবেক্ষণে তোমার অস্তিত্ব মেলে না কোথাও, বরং
তুমি এক অস্পৃশ্য অবজেক্ট, নিরেট নোঙর নিরবতার।
৪। আত্মাহুতি
আবৃত আত্মার আহুতি বাজে দেয়ালের আড়ালে...
দোয়েলের শীষ সে শোনেনি বহু যুগ, ঋজু হৃদয়
রদবদল করে না নাওয়ের ছৈ, বরং রিপেয়ারে দেয়
মনযোগ; তোমার ভাঙা হৃদয়ের প্রতিটা টুকরো জানে
দাগ থেকে গেলেও একত্রিত হতে পারার মূল মানে।
একাত্ম হতে চেয়ে একাগ্রচিত্তে করে গেছি
যার আরাধনা, সে হৃদয়ে আল্পনা আঁকে ভিন্ন রঙের তুলি
কেমন করে বলি, প্রতি রোজ কত কত স্বপ্নের হয় বলি
কত স্বপ্ন সমাজের খড়্গে কেটে নিরবে দেয় আত্মাহুতি।
৫। কাশ কল্লোল
রিমঝিমের পাশে রেখে কুমকুম রঙা সকাল
ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাই সন্তাপ ধারায়
কাশফুলের নিরব কোল্লোলে বয়ে যায় যে শুভ্র হাওয়া
সবুজ মনের নিক্কনে মেতে বলা হয়ে ওঠে না সে কথা
তোমার নরম চাহনীর আল-পথ ধরে চলে যায় বাতাস
যে গোপন ঘরে, ফিরে আসে রুহ ছুঁয়ে সেখানে তোমার বাস
হৃদয়ের রূপোলী উচ্ছ্বাস, অনুচ্চারিত অনুভূতির বাষ্পে-
ভেসে উড়াল দিই শাদা মেঘের আকাশে আচ্ছ্বন্ন আবেশে
তুমি কাশের মতোই ফুটে থাকো অন্তর নদীর দুই ধারে মিলনের
অপেক্ষায় অমলিন বদনে; খসে যাও ক্রঃমে অন্তিমে
দূর থেকে আমি বিরহ খচিত খতিয়ানে টুকে
রাখি তোমার নাম, বদলে যাওয়া সময়ের সংলাপে।