বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫

প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে দৃষ্টিহীন বাবার ঠাঁই প্রতিবেশীর উঠানে

প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে দৃষ্টিহীন বাবার ঠাঁই প্রতিবেশীর উঠানে

দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন আগেই। হাঁটাচলার শক্তিও ফুরিয়েছে। একমাত্র মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী। মাথা গোজার ঠাঁই টিনের ঘরটি ভেঙে পড়েছে ৬ মাস আগে। এখন প্রতিবেশীদের উঠানে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতন জীবনযাপন করছেন ইসহাক মন্ডল (৮০)। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের বাসিন্দা।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ইসহাক মন্ডলের একমাত্র অবলম্বন তার মেয়ে। মেয়ের নাম সালমা (৩৫)। মানসিক প্রতিবন্ধী সালমা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাবার জন্য খাবার জোগাড় করেন। ঘর তৈরির জন্য হাত পাতেন দ্বারে দ্বারে। গ্রামের মানুষ ও প্রতিবেশীরা বাঁশ ও ইট-সিমেন্টের খুঁটির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু টিন ক্রয় ও মিস্ত্রি খরচের টাকা এখনো জোগাড় হয়নি। ফলে ইসহাক ও সালমার শীতকাল কেটেছে চরম কষ্টে।

দেখা গেছে, প্রতিবেশীর উঠোনের এক কোণে জরাজীর্ণ টিন দিয়ে তৈরি একটি ঝুপড়ি ঘর। বাঁশ দিয়ে বানানো দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরে সবই দেখা যাচ্ছে। ঘরের ভেতরে যবুথবু হয়ে শুয়ে আছেন বয়োবৃদ্ধ ইসহাক মন্ডল। ঘরের ভেতরে জরাজীর্ণ কিছু কাঁথা-বালিশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইসহাক মন্ডলের বালিশের পাশেই তার লাঠি।


ইসহাক মন্ডলের প্রতিবেশী ও তার ভাগ্নি ছবিতা খাতুন বলেন, মামা (ইসহাক মন্ডল) হাঁটাচলা করতে পারেন না। সারাদিন ঘরের এক কোণে শুয়ে থাকেন। আমরা যা খাই, তা থেকে তাদের কিছু খাবার দেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা গরিব মানুষ, দুটো মানুষের ভরণপোষণ করা আমাদের জন্য কষ্টকর।



দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন আগেই। হাঁটাচলার শক্তিও ফুরিয়েছে। একমাত্র মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী


ইসহাকের ভাতিজা জামাল হোসেন (৩৭) বলেন, আমাদের উঠোনে টিনের ছাপড়া ঘর করে কোনো রকমে থাকার ব্যবস্থা করেছি। সামনে ঝড়-বৃষ্টির দিন আসছে। এভাবে ঝুপড়ি ঘরেতো থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি সহযোগিতা পেলে চাচার ঘর তৈরি করা যেত।


স্থানীয় ওমর ফারুক টোকন বলেন, আমরা বাঁশ ও ইট-সিমেন্টের খুঁটির ব্যবস্থা করেছি। ইসহাক মন্ডল অসুস্থ মানুষ। প্রতিমাসে অনেক টাকার ওষুধ লাগে। ওষুধের টাকা আমরা কয়েকজন মিলে দিই। সামনে ঝড়-বৃষ্টির দিন আসছে। বর্ষাকালের আগেই ইসহাক মন্ডলের ঘর তৈরি করা দরকার। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।



ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (রিতু) বলেন, এটা আমি আগে জানতে পারিনি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের সঙ্গে ইসহাক মন্ডলের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করবো। অসহায় মানুষের সহায়তা সবার আগে। আমি গ্রামবাসীর সঙ্গেও কথা বলে যা করা দরকার করবো।


কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে কাউকে ঘর করে দেওয়ার কোনো বাজেট এই মুহূর্তে নেই। তবে আমি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো। দরিদ্র ইসহাক মন্ডলের জন্য কিছু করা যায় কি না সেটা নিয়ে আমি আলাপ-আলোচনা করবো।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ