শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৭ বছরেও শেষ হয়নি সমীক্ষা, ফাইলবন্দি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চার লেন প্রকল্প

ফাইল ছবি

দীর্ঘ সাত বছরেও শেষ হয়নি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চার লেনে উন্নীত করার কাজ, শুরুই করা যায়নি। সওজ অধিদপ্তরের ফাইলেই আটকে আছে এই কাজ। মহাসড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা ২০১৩ সালে একটি সমীক্ষা প্রকল্প শুরু হয়।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি’র অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ-সওজ) অধিদপ্তরের এই সমীক্ষা শেষ হয় ২০১৫ সালে। পরে আরো পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সওজ অধিদপ্তরের ফাইলেই আটকে থাকার জট খোলা যাচ্ছে। তবে কাজ থেমে থাকলেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে মহাসড়কটিতে চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা।

অপ্রশস্ত সড়কটিতে বাড়তি গাড়ির চাপে প্রায়ই ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। জানা গেছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে অন্তত ৮৯টি। এছাড়া মহাসড়কটি দুই লেনের এবং সরু। কিন্তু প্রতিনিয়িত বাড়ছে গাড়ির চাপ। বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর ফলে গাড়ির চাপ আরও বাড়বে। বাড়বে দুর্ঘটনা ও জনভোগান্তি।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, এই সড়কটিতে উঁচু-নিচু আছে, সেটি বাদ দেয়া হবে এবং দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা দুই-আড়াই ঘণ্টার পথটি পার হতে আমাদের সময় লাগছে ৪-৫ ঘণ্টা।

এই প্রকৌশলী বলেন, এ প্রকল্পে অর্থায়ন কে করবে, বাইরের কাছ থেকে ডোনার নেবে না সরকারের জিওবি’র মাধ্যমে সেটা হবে। এগুলো নির্ধারণ হয়ে এই প্রকল্প যে কবে আলোর মুখ দেখবে তা আমরা জানি না।

সওজ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৫ সময়ে সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতের সুপারিশ করা হয়।

এজন্য ওই সময় ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এটি ‘কন্ট্রোলড-অ্যাকসেস হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে সওজ অধিদপ্তর। কমে যায় মহাসড়কটির দৈর্ঘ্যও। পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৩৬ কিলোমিটার। এজন্য ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়। তুন নকশায় মহাসড়কটির প্রশস্ততা ধরা হয় ৮২ ফুট। দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য থাকবে পৃথক লেন। পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুটওভারব্রিজ ও দুটি ফ্লাইওভার।

মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। বর্তমানে জি-টু-জি ভিত্তিতে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা করছে জাপানের মারুবেনি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। গত বছর প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে সওজ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, পিপিপির আওতায় মহাসড়কটি সম্প্রসারিত হবে। জি-টু-জি পদ্ধতিতে জাপানি প্রতিষ্ঠান সড়কটি সম্প্রসারণের সমীক্ষাকাজ করছে। সমীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আরডিপিপি হয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সমীক্ষাকাজে বিলম্ব হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হবে।

নতুন করে সমীক্ষা চলতে থাকায় মহাসড়কটি সম্প্রসারণে অনেক বিষয় যুক্ত হবে। ফলে এখনই প্রকল্প ব্যয় নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। তবে জাপানি সংস্থার অধীনে কাজ হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মহাসড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শেষ করা যাবে।

সওজের চট্টগ্রাম সার্কেলের ঊর্ধ্বতন এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির প্রশস্ততা ১৮ ফুটের মতো। অথচ এই সড়কে চলাচল করছে দ্রুতগতির সব গাড়ি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সংস্থার কর্মীদের কারণে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে। দুর্ঘটনা কমাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাসড়কটির উন্নয়নকাজ শুরু ও স্বল্প সময়ের মধ্যে তা শেষ করা জরুরি বলে মত দেন তিনি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল দিন দিন বেড়েই চলেছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাওয়া পর্যটক তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা দেশি-বিদেশি কর্মীদের চাপও।

বাড়তি যানবাহনের চাপে প্রায়ই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কটিতে। চট্টগ্রাম শহরের পটিয়া থেকে চকরিয়া পর্যন্ত অংশে যে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো রয়েছে সেগুলোকেই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন সওজের প্রকৌশলী ও হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ