বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

বৃষ্টি কমলেও নতুন এলাকা প্লাবিত, দুর্ভোগে বানভাসিরা

বৃষ্টি কমলেও নতুন এলাকা প্লাবিত, দুর্ভোগে বানভাসিরা

উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে কয়েক জেলায় নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। দুর্গত এলাকা থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা বন্যার্তদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন।

কুমিল্লায় গোমতী নদীতে পানির উচ্চতা কিছুটা কমেছে। তবে শুক্রবার বিকেলে নতুন করে প্লাবিত হয় ৫০টি গ্রাম। এসব এলাকার অন্তত দেড় লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। দুর্গত এসব মানুষসহ আদর্শ সদর, চৌদ্দগ্রাম ও লাঙ্গলকোট উপজেলার সাত লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নোয়াখালীতে আট উপজেলায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সড়ক ও বাড়ি-ঘর কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব জায়গায় ৫০০ টনের বেশি চাল বিতরণ করেছে প্রশাসন।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরতদের ধৈর্য ধরতে আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ পৌঁছানোর কাজ চলছে। আশা করছি সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রে আমরা ত্রাণ পৌঁছাতে পারব।’

ফেনীর ছয় উপজেলায় ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার জনকে। বর্তমানে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন সব এলাকা। সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।


স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা বন্যার্তদের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, অনেকেই খাবার, বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাবে আছে। তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত।

বৃষ্টি না হওয়ায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে পানি কমেছে। তবে দুর্ভোগে পড়েছে ৭০ হাজার মানুষ। খাগড়ছড়িতে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, দীঘিনালায় এখনও পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ।

খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, দেড় শ থেকে দুই শ পরিবার বন্যার কারণে আটকা পড়েছে। আমরা তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। কবাখালী ও বোয়ালখালীসহ অন্য বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ চলছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানি কমছে ধীরে। হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানিও কিছুটা কমেছে। তবে সেখানে পাঁচ উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ৫৭ হাজার মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, পানি কমলেও নিজেদের বাড়িতে গিয়ে থাকার অবস্থা নেই। বন্যায় সব ভেসে গেছে।


মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে মনু নদের পানির কারণে নতুন করে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে অনেক এলাকায়।


স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় দেশের ১১টি জেলার ৭৭ উপজেলার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। আর আকস্মিক এই বন্যায় গত চার দিনে দুই নারীসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান গতকাল শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো—ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।

বন্যায় দেশের ৭৭টি উপজেলা ও ৫৮৯টি ইউনিয়ন-পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় নিহতদের মধ্যে কুমিল্লায় চার, ফেনীতে এক, চট্টগ্রামে চার, নোয়াখালীতে এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক ও কক্সবাজারে তিন জন রয়েছেন।


//এলএইচ//

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন