শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রংপুর সিটি নির্বাচনের ফলে বিস্মিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল!

নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান- বাংলাবাজার

মেয়র হবে লাঙ্গলের, দ্বিতীয় হবে নৌকা, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল নিয়ে এমন ধারণাই ছিল অধিকাংশের। এলাকা রংপুর বলেই এমন ধারণা হয়তো ছিল অনেকের। কিন্তু সব হিসাব উল্টে গেছে ভোটের ফলাফলে। নৌকার প্রার্থী চতুর্থ হয়ে জামানত হারিয়েছেন। এমন ফলাফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। একইসঙ্গে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।

কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের বছরখানেক আগে নৌকার এমন ফলাফল দলের জন্য ভালো হবে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন, অঙ্গসংগঠনসহ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ভরাডুবির পেছনে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা হাতপাখার ৫০ হাজার ভোট পাওয়া নিয়েও চিন্তিত।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের কাছে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা (ডালিয়া)। এ পরাজয়ের চেয়েও বেশি আলোচনা হচ্ছে নৌকার ভোটের সংখ্যা নিয়ে। নৌকা পেয়েছে ২২ হাজার ভোট, অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পেয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমানও নৌকার চেয়ে ১১ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন।

দলের স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন সঠিক হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা জনগণের কাছে পরিচিত নন। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাঠে ছিলেন, দল থেকে তাদের কাউকে মনোনয়ন দিলে ফল ভালো হতো। হোসনে আরার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠেও ছিলেন না।

দলীয় প্রার্থীর এমন ফলাফলের বিষয়ে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা এমন ফলাফলে আশাহত। মানুষ ভোট দেয়ার আগে দেখেন, প্রার্থী তাদের পাশে থাকেন কি না। যাদের সব সময় পথেঘাটে দেখেন, এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ভোটের এমন ফল রংপুরে আওয়ামী লীগকে আরও পিছিয়ে দেবে। এ ফলাফল থেকে দলের সবার শিক্ষা নেয়া উচিত।

এদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হলেও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। কাউন্সিলরদের ৪৪টি পদের মধ্যে ৪৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৩ জন, জাতীয় পার্টির ৯, স্বতন্ত্র ১৮, বাসদের ১, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ১ এবং যুবদলের ১ কর্মী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুই প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট পাওয়ায় সেখানে পুনরায় নির্বাচন হবে।

অন্যদিকে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এবার নতুন ভোটার বাড়ার সঙ্গে কেন্দ্রসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ভোটগ্রহণের পরিসংখ্যা। মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষে রাত সোয়া ১২টার দিকে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

এরআগে ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর। নির্দলীয় সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান। তিনি পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট।

২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তিনি পান ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহমেদ পান ৬২ হাজার ৪০০ ভোট।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ