সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫

যে আমলে ৭০ হাজার ফেরেশতার দোয়া ও জান্নাতের বাগানের সুসংবাদ

যে আমলে ৭০ হাজার ফেরেশতার দোয়া ও জান্নাতের বাগানের সুসংবাদ

ইসলামে অনেক নেক আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। তেমনই একটি মহৎ আমল হলো রোগীর সেবা করা বা খোঁজখবর নেওয়া। এ আমলকে রাসুলুল্লাহ (স.) জান্নাতের ফলবাগানে অবস্থানের সঙ্গে তুলনা করেছেন।


হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোগীর খোঁজ-খবর নিল, সে আল্লাহর রহমতে ডুবে গেল। আর যখন সে (রোগীর পাশে) বসল, তখন রহমত তার মধ্যে স্থির হয়ে গেল।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫২২)


অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যখন কোনো মুসলিম তার অসুস্থ মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফলবাগানে অবস্থান করতে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৮)


রোগী দেখতে গেলে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, একজন ফেরেশতা তাকে ডেকে বলতে থাকেন, ‘কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলা। তুমি তো জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।’ (সুনানে তিরমিজি: ২০০৮)


আরেক হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালে দেখতে যায়, তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকেন। যদি সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়।’ (সুনানে তিরমিজি: ৯৬৯)


আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কে রোজা রেখেছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কে জানাজায় শরিক হয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কে দরিদ্রকে আহার দিয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কেউ কোনো অসুস্থকে দেখতে গিয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘এ কাজগুলো যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয়, তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতি হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১০২৮)


উল্লেখ্য, সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরও রোগীর প্রতি অবহেলা করলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার। এর মধ্যে একটি হলো—যখন কেউ অসুস্থ হবে, তার সেবা করা।’ (সহিহ মুসলিম: ২১৬২) তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাও, রোগীর শুশ্রূষা করো এবং বন্দিদের মুক্ত করো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৩৭৩)


রোগী দেখার আদব

ইসলামে রোগী দেখার কিছু আদব রয়েছে। যেমন—রোগীর অবস্থা জানতে চাওয়া, তার কোনো প্রয়োজন আছে কি না খোঁজ নেওয়া, তার কাছ থেকে দোয়া চাওয়া এবং তার জন্য দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (স.) সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কে দেখতে গিয়ে তিনবার দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬৫৯)


বর্তমান ইসলামি বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু আদবের কথা উল্লেখ করেন। যেমন-সাক্ষাৎ সংক্ষিপ্ত রাখা, নিয়ম ও সময়সূচি মেনে চলা, রোগীকে হতাশ না করে আশার বাণী শোনানো, তার কষ্টদায়ক কোনো কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকা। এছাড়া, সুগন্ধি ব্যবহারে রোগীর কষ্ট হলে তা পরিহার করা এবং বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না করে তার বিশ্রাম ও চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। (আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়্যা: ৩১/৭৭-৭৯)

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ